মনের মোকদ্দমা

 

"আচ্ছা এখানেই তো সেই বিশ্ববিখ্যত পরিত্যক্ত ভুতুড়ে রেলস্টেশন না?"। যেইনা ভাবা অমনি মনের মধ্যে একটা মোকদ্দমা শুরু হয়ে গেল। বেশ জটিল মামলা কোর্টরুম ঠাসাঠাসি, বেজায় চেঁচামেচি, জনতা ফিস্ ফিস্ করে বলে " সাহস দেখছো ছোকরার, কোথায় যাওয়ার কথা ভাবছে?"।কিছুদুরে

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আসামি পিটপিট চোখে তাকায় ( অনেকটা আমার মতন দেখতে ), কালো কোর্ট পরা সরকারি পক্ষের উকিল ( এটাও দেখছি আমারি মতন সুদর্শন) কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। আসামি পক্ষের উকিল (এটাও আমি) এখনো বিড়ম্বনার মধ্যে মামলা কোন দিকে যায়, "যেদিকেই যাক তাতে তার কি?" এটা কি আসল মোকদ্দমা নাকি? এটা মনের মধ্যে দ্বন্দ্বের মোকদ্দমা। উঁচু চেয়ার খানি চেপে নাক উঁচু চশমা নিচু জজ সাহেব (ওরে বাবা এটাও আমি) গম্ভীর গলায় বলে " অর্ডার! অর্ডার!" । পুরো কোর্টরুম নিস্তব্ধ নিমেষে। সরকারি উকিল পরোক্ষনে গর্জে উঠলো " হুজুর দেখুন কাঠগড়ায় দাঁড়ানো এই আসামিকে, বিগত ৩০ বছরে সাহসের কাজ একটাও করেনি, আজকে কি করে ভাবে যে সেই পরিত্যক্ত স্টেশনে যাবে? সমস্ত সাক্ষ প্রমান বলে দিনের আলোতেও লোকজন যেতে সাহসে কুলায় না সেখানে! আরো লক্ষ্য করুন আপনার টেবিলে রাখা কাল্পনিক ছবিগুলোতে হুজুর এই। এই, আসামি ৪০ এর গতিবেগে আসা মোটরসাইকেল এর পিছনে হেলমেট পরে ফাঁকা রাস্তায় কাঁপতে কাঁপতে আসছে , আর এ কিনা বলে এরকম এরূপ ভয়াবহ জায়গাতে যাবে? "। জজসাহেব চশমাটা একটু আরো নামিয়ে আসামির দিকে চেয়ে " মতলব টা কি তোমার? হটাৎ করে নতুন করে কোনো সাহস পেলে নাকি এই ৩০ বছর পরে ? নাহ এই ধৃষ্টতা এর শাস্তি পেতে হবে তোমাকে। বেগুনকোদর এর রেলস্টেশন তুমি যাবে না। তোমার শাস্তি হলো তুমি আবার মোটরসাইকেলে করে ৪০, না, না, ৮০ এর গতিবেগে কাঁপতে কাঁপতে বাড়ি ফিরবে" । শাস্তি শুনে এতক্ষনে আসামির ধড়ে প্রাণ এলো, ভুতুড়ে রেলস্টেশনটাতে যাওয়া আর ফাঁসি দুটোর মধ্যে খুব বেশি দূরত্ব খুঁজে পাচ্ছিলো না এতক্ষনধরে । যাহোক মোকদ্দমা শেষ! জজ, উকিল, জনতা সবাই বেকসুর খালাস। শুধু আসামি টা চলন্ত মোটরসাইকেল এর পিছনে বসে কাঁপছে, সামনে গতিবেগ এর কাঁটা ৮০ (এইযাত্রাটাও বেঁচে গেলুম)।

Comments

Popular posts from this blog

# 333 Dream Girl

#331 Smoking Hell

# Be Mine